সফল বিনিয়োগকারীদের ৭টি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস/ 7 Habits of Successful Investor

 

Share market tips

শেয়ার মার্কেটে সফল হতে হলে কিছু নিয়মকানুন অবশ্যই পালন করতে হয়। সফল বিনিয়োগকারী হতে হলে আপনাকে কিছু অভ্যাস অবশ্যই গড়ে তুলতে হবে। শেয়ার মার্কেটে সফল কিছু বিনিয়োগকারীদের দিকে খেয়াল করলে আমরা দেখতে পারবো কিছু অভ্যাস বা নিয়ম কানুন তারা সকলেই অনুসরণ করে। এসকল অভ্যাস বা নিয়মকানুন থেকে 7 টি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস নিয়ে আজকে আমরা আলোচনা করব। চলুন শুরু করি।

১) ধৈর্য, ধৈর্য এবং ধৈর্য

"Stock market is a device for transferring money from the impatient to patient.".                    

                                                    ...................... Warren buffett

সফল বিনিয়োগকারীরা ধৈর্য সহকারে বসে থাকে, কখন একটি ট্রেড করার অপরচুনিটি বা সুযোগ তৈরি হবে। তারা মার্কেটের পেছনে ছুটে না। তারা অপেক্ষা করে মার্কেট কখন তাদের দিকে আসবে। আমরা একটি শেয়ার কেনার পর বসে থাকি কখন এটি বিক্রি করব। আমরা সঠিক শেয়ার নির্বাচন করলেও অন্যেরা যে দিকে ছুটছে সেদিকে ছোটার জন্য তাড়াহুড়া করি। অপরদিকে সফল বিনিয়োগকারীরা ধৈর্য সহকারে বসে থাকে। তারা ধৈর্য ধারণ করে যতক্ষণ না পর্যন্ত একটি ভালো ট্রেডের সুযোগ তৈরি হয়। আমরা একটি ট্রেড করার পর সারাক্ষণ প্রতিটি মুহূর্ত স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকি দেখে যে শেয়ারের দাম বাড়ছে না কমছে। যা আমাদের মধ্যে স্ট্রেস তৈরি করে এবং পরবর্তী ট্রেড করতে ধাবিত করে। কিন্তু সফল বিনিয়োগকারীরা একটি ট্রেড করে সারাক্ষণ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকে না। তারা অপেক্ষা করে কখন শেয়ারটির ট্রেড করার ভালো সুযোগ তৈরি হবে। সুতরাং আমাদের উচিত ধৈর্য ধারণ করা। সুযোগের অপেক্ষা করা। তাহলে আমরা সফল হতে পারবো।

২) দুশ্চিন্তা না করে যে সকল বিষয় আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি ওই দিকে লক্ষ রাখা

আমরা একটা শেয়ার কেনার পর শেয়ারের দাম বাড়বে না কমবে, এই ট্রেড এ আমরা কি লাভ করতে পারবো নাকি পারবো না, ট্রেডটির রেজাল্ট কি হবে সেই নিয়ে দুশ্চিন্তা করি। কিন্তু আমরা ভাবি না যে আমাদের দুশ্চিন্তা শেয়ারটির দাম বাড়ার বা কমার ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলবে না।  সফল বিনিয়োগকারীরা ট্রেড এর ফলাফল নিয়ে দুশ্চিন্তা করে সময় নষ্ট করে না। বরং তারা যে সকল বিষয় দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে সেগুলো নিয়ে চিন্তা করে। তারা কখন বিনিয়োগ করবে, কখন বিনিয়োগ করবে না, কখন একটি ট্রেডিং এন্ট্রি নেবে, কখন থেকে বের হয়ে যাবে, কোন শেয়ারে বিনিয়োগ করবে, কখন স্টপ লস নিবে, কত টাকার কোন সেক্টরের শেয়ার কিনবে এগুলো নিয়ে চিন্তা করে। সুতরাং যে সকল বিষয় আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না সেগুলো নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে, কি করলে আমরা সফল হতে পারব সেগুলোর পেছনে সময় ব্যয় করা উচিত।

৩) শেয়ার কখন বিক্রি করব তা আগেই ঠিক করা

আমরা যখন অনেক এনালাইসিস করে একটি শেয়ার কিনি, বেশিরভাগ সময় আমরা জানি না আমরা কখন শেয়ারটি বিক্রি করব। শেয়ারের দাম বাড়লে আমরা এই আশা নিয়ে বসে থাকি যে শেয়ারের দাম হয়তো আরও বাড়বে। পরে দেখা পরে হয়তো শেয়ারের দাম আরও কমে যায় এবং আমরা ফ্রাস্ট্রেটেড হয়ে শেয়ারটি লসে বিক্রি করে দেই। আবার শেয়ারের দাম যখন কমে যায় তখন আমরা এভারেজ করি, আবার এভারেজ করি। দাম আরও কমে গেলে আমরা শেয়ারটি তে আটকে যাই অথবা অনেক লস দিয়ে বের হয়ে যাই। সফল বিনিয়োগকারীরা আগেই ঠিক করে শেয়ারটি তারা কখন বিক্রি করবে। তারা এনালাইসিস এর মাধ্যমে আগে থেকেই ঠিক করে নেয় কতটুকু দাম বাড়লে বা কতটুকু দাম কমলে শেয়ার বিক্রি করবে।

৪) ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা

আমরা একটি ভুল ট্রেড করলে তা ভুলে গিয়ে নতুনভাবে নতুন ট্রেডের চিন্তা করি। আমরা এনালাইসিস করিনা যে কেন এই ভুলটি হলো, কি করলে ভুলটি এড়ানো যেত, কোথায় ডিসিশন নেওয়ার ভুল ছিল। ফলে ভবিষ্যতে ভুলটি পুনরায় ঘটে। সফল বিনিয়োগকারীরা কোন ভুল করলে তারা ভুলের কারণ, কি করলে আরো ভালো করা যেতো সেগুলো অনেক গবেষণা করেন। যাতে ভবিষ্যতে ভুলের পুনরাবৃত্তি না ঘটে।

৫) ট্রেডিং এর ক্ষেত্রে একটি সিস্টেম অনুসরণ করা

আমরা ট্রেডিং এর ক্ষেত্রে নিজেদের ইমোশনকে বেশি প্রাধান্য দেই। যে শেয়ারে বিনিয়োগ করলে লাভ হবে বলে আমাদের মনে হয়, সেই শেয়ারে বিনিয়োগ করি। আমাদের যখন মনে হয় তখন আমরা শেয়ার ক্রয় করি এবং বিক্রয় করি কিন্তু শেয়ার মার্কেটে ইমোশনের কোন মূল্য নেই। সফল বিনিয়োগকারীরা সকল ক্ষেত্রেই কিছু সিস্টেম নিয়ম প্রক্রিয়া অনুসরণ করেন। সফল বিনিয়োগকারীরা শেয়ার নির্বাচনের ক্ষেত্রে কি কি ফান্ডামেন্টাল বিষয় দেখবেন, শেয়ার ক্রয় বিক্রয় কি কি টেকনিক্যাল ফ্যাক্টর দেখবেন সকল কিছুই সিস্টেমেটিক্যালি করে থাকেন।

৬) প্রত্যেক নতুন ট্রেড এর ক্ষেত্রে নতুন করে চিন্তা করা

আচ্ছা একটি কয়েন যদি 99 বার টচ করার পর 99 বাড়ি হেড পরে তাহলে 100 তম বারে হেডফোনের সম্ভাবনা কতটুকু। 50 – 50। আপনি কয়েকটি ট্রেডে একই নিয়ম ফলো করে লাভ করেছেন। পরবর্তী ট্রেডে যে একই নিয়ম ফলো করে লাভ করতে পারবেন সে বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা নেই। কয়েকটি সফল ট্রেডার পর আমরা যদি ওভার কনফিডেন্ট হয়ে আরো বেশি টাকা ঐরকম ট্রেডে ব্যবহার করি, ফলে, আমরা অনেক সময় বড় ক্ষতির সম্মুখীন হই। সুতরাং সকল নতুন ট্রেড এর ক্ষেত্রে নতুন করে এনালাইসিস করে ট্রেডে এন্ট্রি নেওয়া উচিত। 

৭) লোভে বা প্ররোচনায় পড়ে বিনিয়োগ না করা

আমরা অনেক সময় মার্কেটে যে শেয়ারের দাম বাড়ছে, ঐ শেয়ারটি যদি ভালো নাও হয় তারপরও আমরা অতিরিক্ত লাভের আশায় ঐ শেয়ারে বিনিয়োগ করে থাকি। ফলে বেশীরভাগ সময় আমরা বড় ক্ষতির সম্মুখীন হই। সফল বিনিয়োগকারীরা কখনো লোভে পড়ে বিনিয়োগ করে না। তারা একটি শেয়ারের মূল্য অতিমূল্যায়িত বা অবমূল্যায়িত আছে কিনা তা বিবেচনা করে শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করে থাকে। সুতরাং আমাদের উচিত কখনোই লোভে বা অতিরিক্ত লাভের আশায় বিনিয়োগ না করা।

আজকে আমরা শেয়ার মার্কেটে সফল হওয়ার জন্য কিছু টিপস জানলাম আমরা শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এগুলো অনুসরণ করার চেষ্টা করব এবং শেয়ার মার্কেট সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে আমাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে শেয়ার মার্কেটে সফল হওয়ার চেষ্টা করব। আজ এই পর্যন্তই। ভালো থাকবেন।


Post a Comment

Previous Post Next Post